দুর্গাপূজায় চণ্ডীপাঠ করা হয় কেন, জানুন দেবীর মহিমা | Durga Puja Chandi Path | Hindu Shastra |

দুর্গাপূজায় চণ্ডীপাঠ  অবশ্যকর্তব্য।

দুর্গাপূজায় চণ্ডীপাঠ করা হয় কেন, জানুন দেবীর মহিমা | Durga Puja Chandi Path  | Hindu Shastra |

দুর্গাপূজায় শ্রীশ্রীচণ্ডীপূজা ও পাঠ অবশ্যকর্তব্য। এই দেবী মাহাত্ম্য পাঠ কল্পারম্ভের দিন থেকেই আরম্ভ হয়। কল্পারম্ভ বিভিন্ন প্রকারের হতে পারে। নবম্যাদি কল্পারম্ভ হয় ভাদ্র পূর্ণিমার পর কৃষ্ণপক্ষের নবমীতে। প্রতিপদাদি কল্পারম্ভ হয় মহালয়া অমাবস্যার পরের তিথি শুক্লাপ্রতিপদ থেকে। এবং, ষষ্ঠ্যাদি কল্পারম্ভ হয় দুর্গাপূজার আগের দিন শুক্লাষষ্ঠী তিথি থেকে। কোথাও কোথাও মহালয়ার দিন থেকে চণ্ডীপাঠ আরম্ভ হতে দেখা যায়। তবে, প্রায় সবস্থানেই দুর্গাপূজার আগের দিন ষষ্ঠী থেকে অথবা দুর্গাপূজার প্রথম দিন সপ্তমী থেকে আরম্ভ হয়। এবং, নবমী পর্যন্ত চণ্ডীপাঠ হয়ে থাকে।
দুর্গাপূজা কাম্য পূজা। শত্রুনাশ, ঐশ্বর্যলাভ ইত্যাদি কামনাই কাম্য পূজার বৈশিষ্ট্য। তাছাড়া দেবী দুর্গা হলেন মহিষাসুরমর্দিনী। এই চণ্ডীতেই আছে দুর্গা কীভাবে মধুকৈটভকে বধ করলেন, তারপর মহিষাসুরের সেনাপতি চিক্ষুর ও চামর, ষাট হাজার রথারোহী সৈন্যসহ উদগ্র, এক কোটি রথারোহী সৈন্যসহ মহামনু, পাঁচ কোটি সৈন্যসহ অসিলোমা, ষাট লক্ষ সৈন্যসহ বাস্কলাসুর, বহু সহস্র অশ্বারোহী, গজারোহী ও রথারোহীসহ পরিবারিত, পঞ্চাশ অযুত রথারোহীসহ বিড়ালাক্ষ এবং কয়েক কোটি অশ্ব, হস্তী ও রথারোহীসহ মহিষাসুর দেবীর দ্বারা কীভাবে নিহত হলেন, তার কাহিনীও।
এই কাম্য পূজায় একদিকে যেমন দেবীর কাছে প্রার্থনা করা হয়—‘রূপং দেহি জয়ং দেহি যশো দেহি দ্বিষো জহিবলে এবং সেইসঙ্গে নানা বিঘ্নশান্তির জন্যও প্রার্থনা করা হয়। দেবী মাহাত্ম্য শ্রীশ্রীচণ্ডীপাঠের এই হল বৈশিষ্ট্য।

Advertisement

Powered By GOOGLE ADSENCE

দেবীর দশ হাতের অস্ত্র শ্রীশ্রীচণ্ডীতে দেবী দুর্গাকে দশপ্রহরণধারিণী বলা হয়েছে। মহিষাসুর বধের জন্য দেবীর আবির্ভাব যেমন দেবতাদের পুঞ্জীভূত তেজ থেকে, দেবীর দশ হাতের দশটি প্রহরণ বা অস্ত্রও তেমনি দেবতাদেরই দান। শিব দিয়েছিলেন ত্রিশূল, এরপর যাঁরা যে-যে অস্ত্র দিলেন তা হল: মহাকালখড়্গ, বিষ্ণুচক্র, বায়ুতীক্ষ্ণ বাণযুক্ত পূর্ণ চাপ, অগ্নিশক্তি (গদা), যমখেটক (কালদণ্ড), বরুণনাগপাশ, ইন্দ্রঅঙ্কুশ ও ঘণ্টা, বিশ্বকর্মাকুঠার। নিজেদেরই সৃষ্ট সেই অনুপমা সিংহবাহিনী দশপ্রহণধারিণী দেবী দুর্গাকে দেখে দেবতারা আনন্দে জয়ধ্বনি করে উঠেছিলেন।
দুর্গাপূজায় চণ্ডীপাঠ করা হয় কেন, জানুন দেবীর মহিমা | Durga Puja Chandi Path  | Hindu Shastra |

দেবীর প্রতিমার চালচিত্র ইদানীং দুর্গাপ্রতিমার পেছনে চালচিত্র বড় একটা দেখা যায় না, বিশেষত, বারোয়ারি পূজার প্রতিমায় চালচিত্র প্রায় থাকেই না। কিন্তু, প্রতিমার সঙ্গে চালচিত্র খুবই তাৎপর্যপূর্ণ এবং এটি সর্বধর্মসমন্বয়েরও প্রতীক। ধর্মসংক্রান্ত উদারতায় বৈদিক ঋষিদের তুলনা নেইদুর্গা-প্রতিমার চালচিত্রেও তারই প্রকাশ। দুর্গাপূজাকে মহাপূজা বলা হয়। এই পূজায় কেবল দেবী দুর্গাই সপরিবারে পূজিতা হন না, বিধি অনুসারে, হিন্দুধর্মের সব সম্প্রদায়েরই দেবদেবীর এই সময় আবাহন ও পূজা করতে হয়। এবং, এই মহাপূজা নাম সার্থক করতেই ঋষিরা একটি চালচিত্রের মাধ্যমেই যেন সব দেবদেবীকে এক জায়গায় হাজির করে ধর্মসমন্বয় ঘটিয়েছেন। দুর্গাদেবীর পেছনে যে চালচিত্র থাকার নিয়ম তার মাঝখানে আঁকা হয় শিবের সাথে গণেশজননী, দুপাশে ব্রহ্মা, বিষ্ণু, রাধাগোবিন্দ, দশমহাবিদ্যা, নবগ্রহ, প্রভৃতি শাক্ত, শৈব, বৈষ্ণব, সৌর, গাণপত্য, অর্থাৎ সবধর্মসম্প্রদায়েরই দেবদেবী স্থান পান এই চালচিত্রে। তাই দুর্গাপূজাকে সংহতি ও সমন্বয়ের পূজা হিসাবেও ভাবা হয়।

স্বামী দেবেন্দ্রানন্দের শ্রীমা ও বেলুড় মঠের দুর্গাপূজাথেকে  

Post a Comment

0 Comments

Translate

close